ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলমান অমর একুশে বইমেলা ২০২২ এর একুশে গ্রন্থমেলা মঞ্চে দেশের অন্যতম প্রকাশনা সংস্থা “একাডেমিয়া পাবলিশিং হাউজ লিমিটেড (এপিএল)” কর্তৃক সদ্য প্রকাশিত ৫টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে ১২ মার্চ ২০২২ (শনিবার, বিকাল ৪.৩০ মিনিটে)।
এপিএল’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. এম আব্দুল আজিজের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একুশে পদক প্রাপ্ত কবি আল মুজাহেদী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্মতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী নুরুল ইসলাম, কবি গবেষক ও চিন্তক মুসা আল হাফিজ, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. রিটা আশরাফ, বিশিষ্ট চিন্তক ও প্রকাশক আহমদ হোসেন মানিক, নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সহ বরেণ্য কবি সাহিত্যিক ও লেখক বৃন্দ।
“আল্লামা ইকবালঃ চিন্তা ও দর্শন” আব্দুল কাদের জিলানী স্বম্পাদিত বইটি সম্পর্কে কবি আল মুজাহেদী বলেন, ইকবাল ওরিয়েন্টাল এবং অক্সিডেন্টাল প্রাচ্য ও প্রতীচ্য সোসাইটির বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্যের মধ্যে একটি আত্মিকতা ও আত্মীয়তার মেলবন্ধন রচনা করতে চেয়েছিলেন। সেই যে জীবনের অগ্নিশিখা জ্বালিয়ে তুলেছিলেন সেটাই জগৎ মনোমন্দিরে স্থাপন করতে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন তিনি। তাঁর সমগ্র জীবন কাব্য ও দর্শন জীবনমঞ্চে উপবীত করেছিলেন- বিশেষ স্বাতন্ত্র্য চিহ্নিত ব্যক্তি সত্তার। তাঁর ব্যক্তি স্বজ্ঞা (Intuition)-কে সমন্বিত করতে সতত জাগ্রত ও জীবিত করে রাখার জঙ্গমতা সৃষ্টি করেছিলেন। বইটি মহাকবিকে নিয়ে চমৎকার একটি প্রকাশনা।
“বিশ্বের প্রধান ধর্মসমূহ” ড. আবু বকর মো. জাকারিয়া মজুমদার ও ড. মোঃ আবদুল কাদের রচিত বইটি নিয়ে অধ্যাপক কাজী নুরুল ইসলাম উল্লেখ করেন, পৃথিবীতে মানবসভ্যতার বিকাশে ধর্মের ভূমিকা প্রনিধানযোগ্য। দীন, ধর্ম ও রিলিজিয়ন- যেভাবেই নামকরণ করা হোক, তার মূল উদ্দেশ্য বিশ্বের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস, আচরণ, ইবাদত-পূজা-র্অ্চনা, সামাজিক ও আত্মিক রীতিনীতি তুলে ধরা। ধর্মের উৎপত্তি সম্বন্ধীয় বিভিন্ন দার্শনিক মতবাদসমূহ এবং বিশ্বের প্রধান ধর্মসমূহের মৌলিক পরিচিতি, প্রতিষ্ঠাতা, ধর্মগ্রন্থ, আকীদা-বিশ্বাস, বিকাশ সংক্রান্ত প্রামাণ্য তথ্য স্থান পেয়েছে। বইতে একদিকে সেসব ধর্ম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যারা নিজেদেরকে প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত বলে দাবি করে থাকে, যেমন- ইসলাম, ইয়াহুদী, খ্রিষ্টধর্ম, সাবেয়ীধর্ম, জরথুষ্টবাদ এবং অন্যদিকে পৌত্তলিক ধর্মসমূহের কথা, যেমন- হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, কনফুসীয়বাদ, তাওবাদ, শিনতো ও শিখ-এর আলোচনাও রয়েছে। গ্রন্থ পরিচিতি প্রবেশকারী নুরুল ই হ তাই বিভিন্ন ধর্মের তুলনামূলক বিশ্লেষণ এবং ধর্মতত্ত্ব ও তুলনামূলক ধর্মের রূপরেখা বিষয়ে বাংলাভাষায় এ বইটি অনন্য।
“মওলানা ভাসানী রাজনীতি, দর্শন ও ধর্ম” ড. মোঃ ফোরকান মিয়া রচিত বইটির আলোচনায় মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, মওলানা ভাসানী ছিলেন একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিক। ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাঁর নির্মোহ রাজনীতি ও অতি সাধারণ জীবনযাপন যেমনি তাঁকে মজলুম জননেতায় পরিণত করেছিল, তেমনি তাঁর রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে ও রয়েছে নানা বিতর্ক। প্রগতিশীলরা ও ইসলামপন্থীরা তাঁকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। মূলত প্রগতিশীল রাজনীতি ও ইসলামী রাজনীতি তথা সমাজতন্ত্র ও ইসলামের মধ্যে তিনি কীভাবে সমন্বয় করেছেন তারই একটি বিশ্লেষণ এই গ্রন্থ। এছাড়া তাঁর রাজনৈতিক কর্মপদ্ধতি ও বাস্তবায়ন কৌশল এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁর অবস্থান নিয়ে যে বিতর্ক আছে তার একটা নির্মোহ পর্যালোচনা সন্নিবেশিত হয়েছে এ গ্রন্থে।
“ধ্বনিবিজ্ঞান আরবি ধ্বনিতত্ত্ব” অধ্যাপক এ কিউ এম আবদুস শাকুর খন্দকার প্রণীত বইয়ের আলোচনায় অধ্যাপক ড. রিটা আশরাফ বলেন, আমাদের পরিচিত বাংলা, ইংরেজি, আরবি ইত্যাদি ভাষায় ধ্বনিবিজ্ঞান ও ধ্বনিতত্ত্ব পরিভাষা দুটি সূক্ষ্মতর বিচারে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। শব্দ দুটি কখনো কখনো অবশ্য সমার্থক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক সব যুগেই ধ্বনিবিজ্ঞান ভাষাগবেষণার একটি অপরিহার্য বিষয় বলে বিবেচিত হয়ে এসেছে। আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বাংলা, ইংরেজি ও আরবি বিভাগে সাধারণ ধ্বনিবিজ্ঞান ও সংশ্লিষ্ট ভাষার ধ্বনিতত্ত্ব পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত। পাঠ্য হলেও এ তিনটির মধ্যে আরবি ধ্বনিতত্ত্ববিষয়ক কোনো গ্রন্থ এখনো পর্যন্ত বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হয়নি; যদিও আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিগত প্রায় আটশত বছর যাবৎ এদেশে পড়ানো হচ্ছে। গ্রন্থটিতে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে যা পাঠক সমাজে সমাদৃত হবে।
“আধুনিক বাংলা ভাষায় আরবী ও ফারসি শব্দমালার ব্যবহার” মুহম্মদ আবদুর রসুল রচিত বইটি প্রসঙ্গে ড. এম আব্দুল আজিজ বলেন, আধুনিক বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি শব্দমালার ব্যবহার সম্পর্কিত বিতর্ক কিছুটা হলেও প্রমাণিত হবে। আসলে বাংলা ভাষার আরবি-ফারসি শব্দগুলো বাংলা ভাষার স্থায়ী ও অমূল্য সম্পদ। শব্দগুলো মধ্যযুগে মুসলমানদের মাধ্যমে আগত হলেও আজও অর্থাৎ একবিংশ শতাব্দিতে এসেও এগুলোর ব্যাপক ব্যবহার বিশেষভাবে লক্ষণীয়। অন্য কোনো ভাষার শব্দমালা এত বিশাল সংখ্যায় বাংলা ভাষায় প্রবেশের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বর্তমানে কিছু কিছু ইংরেজি শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবেশ করলেও সংস্কৃত ভাষার শব্দমালার প্রবেশের সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। জোর করে ঢুকানো সংস্কৃত শব্দমালার বাস্তব ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। সত্যিই অনেক সংস্কৃত শব্দ এখন বাংলা ভাষার অভিধানে বোঝা হয়ে আছে।বাংলা ভাষার সাধারণ অভিধানগুলোয় আরবি ফারসি শব্দমালার অন্তর্ভুক্তি মোট আরবি-ফারসি শব্দের এক-চতুর্থাংশের মতো হয়ে থাকে। এদেশ প্রায় নব্বই শতাংশ মুসলমানের দেশ। কাজেই বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি শব্দমালার ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টিতে বর্তমান বইটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।
এপিএল এর সহকারী পরিচালক ড. সৈয়দ শহিদ আহমেদ উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।