ভাষাবিজ্ঞান ও আরবি ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে বাংলা ভাষায় রচিত এটিই প্রথম স্বতন্ত্র গ্রন্থ। এ-পর্যন্ত উদ্ভাবিত মানবিক জ্ঞানবিজ্ঞানের মধ্যে ভাষাবিজ্ঞান একটি মৌলিক, প্রাচীন ও সৃষ্টিশীল বিজ্ঞান। ভাষা নিয়ে প্রাচীন চীনা, ভারতীয় ও গ্রিকগণ এবং সর্বোপরি মধ্যযুগীয় আরবগণ যে ব্যাপক-বিস্তৃত গবেষণা করে গেছেন একমাত্র আধুনিক ইউরোপকেই এ ক্ষেত্রে তাদের যোগ্য উত্তরসূরি বলে মনে করা হয়। আমেরিকা এসেছে তাদের অনেক পরে।
উনিশ শতকের ইউরোপে ভাষা নিয়ে যে বিশাল কর্মযজ্ঞ আরম্ভ হয় তা আরবদেশ ও আমাদের দেশে আনীত হয় বিশ শতকের মাঝামাঝি। গত শতকে আমাদের দেশে অনেক আন্তর্জাতিক মানের ভাষাবিজ্ঞানীর আবির্ভাব ঘটে এবং তাঁরা ভাষাতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব, ধ্বনিতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্ব নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেন। কিন্তু স্বভাবতই সবই আবর্তিত হয় বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে। বিগত প্রায় আটশত বৎসর যাবৎ এ দেশের বিপুলসংখ্যক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য ও অধীত আরবি ভাষাসংক্রান্ত বিজ্ঞানসমূহ নিয়ে গবেষণার কাজটি বরাবরের মতো আজও অনেকটা অবহেলিতই রয়ে গেছে। দেশের আরবি এবং ইসলামি পণ্ডিতগণও বিষয়টির প্রতি যথোচিত গুরুত্বারোপ করেননি। প্রধানত এ-কারণেই লেখকের এ বিনীত প্রয়াস।
বইটির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য, আরবি ভাষায় রচিত মৌলিক ও প্রাথমিক উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং প্রাঞ্জল ভাষায় তা পাঠকদের সামনে উপস্থাপিত করা। গ্রন্থটির ১১টি অধ্যায়ে মোট ১১টি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে, যেগুলোর প্রথমটিতে আলোচিত হয় ভাষাবিজ্ঞান ও ভাষাতত্ত্ব পরিভাষা দুটির উদ্ভাবন, বিবর্তন, বিভাজন ও বর্তমান ব্যবহারের কথা।
অন্যগুলোতে আলোচিত হয় আরবি ব্যাকরণ, ভাষাতত্ত্ব, ব্যাকরণতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব, ধ্বনিতত্ত্ব, অভিধানবিদ্যা, আরবি ভাষায় কৃতঋণ শব্দ, আফ্রো-এশীয় ভাষাবংশ, বাংলাভাষা ও ব্যাকরণে আরবির প্রভাব, সিবওয়াইহ ও ইবন জিন্নির জীবন ও কর্ম, আধুনিক আরবি ভাষায় লিঙ্গের ব্যবহারে প্রচলিত ভুল প্রভৃতি বিষয়
মুতাকাদ্দিমীন বা পূর্ববর্তী আরবদের গবষণার ফলাফলের সাথে পাশ্চাত্য প্রভাবিত আধুনিক আরবদের গবেষণার ফলাফলও লেখাগুলোতে যুক্ত করা হয়েছে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে। গবেষণার জন্য উর্বর ও উৎপাদনশীল কিন্তু স্বপ্নকর্ষিত ও স্বল্পব্যবহৃত এ ক্ষেত্রটির প্রতি বাংলাভাষী ছাত্র, শিক্ষক, গবেষক ও অনুসন্ধানী পাঠকবৃন্দের মনোযোগ আকৃষ্ট হলে লেখকের শ্রম সার্থক হবে এবং বাংলাভাষা ও সাহিত্য এর দ্বারা উপকৃত হবে।