খিস্টধর্মের প্রচারকগণ মূলতঃ ‘স্রষ্টার নিদর্শন (Aayatullah) বুঝাতে ইংরেজি শব্দ ‘সায়েন্স (বিজ্ঞান)’ এর প্রচলন শুরু করেন। কবি ও ধর্মপ্রচারকগণ ১৩৪০ সাল থেকে এই শব্দটিকে ‘স্রষ্টার বিজ্ঞান (Science of God) অর্থে ব্যবহার করতে থাকেন; যেমন, শেক্সপিয়ার ‘প্রকৃতির রহস্য’ তথা ‘সৃষ্টির রহস্য’ হিসেবে শব্দটিকে ব্যবহার করেন।
বর্তমানে ব্যবহৃত ‘পরীক্ষামূলক বিজ্ঞান (Experimental Science) ১৮৩০ সাল পর্যন্ত ‘প্রাকৃতিক দর্শন (Natural Philosophy) হিসেবে অভিহিত ছিলো। ল্যাটিন ‘Scientiis wKsev Scientiae experimentalis’ শব্দদ্বয় যদিও প্রকৃতঅর্থে ‘পরীক্ষামূলক বিজ্ঞান’ কে-ই বুঝায়, তবুও ইউরোপিয়ান স্কলারগণ ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের বিরোধিতার ভয়ে এই পরিভাষাগুলো ব্যবহারে বিরত থাকেন।
এতদ্বসত্ত্বেও ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে গ্রীকদের উদ্ভাবিত ‘প্রাকৃতিক দর্শন (Natural Philosophy) পরিভাষাটি ‘পরীক্ষামূলক বিজ্ঞান (Experimental Science) পরিভাষায় প্রতিস্থাপিত হয়। অর্থাৎ, পরীক্ষামূলক বিজ্ঞান বলতে বাস্তবিকভাবে আল ‘উলুম আল তাজ্রিবীয়াহ’ এবং ‘Scientiae experimentalis কে-ই নির্দেশ করে।
আরবী শব্দ ইল্ম উলুম এর বহুবচন- যা বিজ্ঞান অর্থে ব্যবহৃত হয়। কুরআনেই সর্বপ্রথম ‘ইলম’ শব্দটির ব্যবহার হয় যা বর্তমানে শিখন (ষবধৎহরহম) হিসেবে বহুল পরিচিত। নবী মুহাম্মদ (সা.) এ পরিভাষাটিকে সুবিন্যস্তরূপে সজ্জিত করেন এবং প্রাথমিক যুগের মুসলিম স্কলারদের লেখনীর মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এটি ‘বিজ্ঞান’ অর্থে ব্যবহৃত হতে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, জাবির ইবন হাইয়ান- যিনি রসায়ন বা আলকেমী’র জনক, তিনি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মূলভিত্তি হিসেবে ‘তাজরীব’ কে নির্ধারণ করেন যা পরীক্ষামূলক পদ্ধতি হিসেবে সর্বপ্রথম ব্যবহুত হয়। পরবর্তীতে নবম শতাব্দীতে আল-খাওয়ারিজমী বীজগণিত-পাটিগণিত উদ্ভাবন করেন এবং আল্-কিন্দী এটিকে চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা ও পদার্থবিদ্যার গবেষনার ক্ষেত্রে সম্প্রসারণ করেন।
সবশেষে, আল-ফারাবী, ইবন সিনা, ইবন হাইথাম ও আল-বিরুনী ‘আল-উলুম আল-তাজরিবীয়াহ’-কে অসামান্য উচ্চতায় নিয়ে যান- যার ফলে বারো শতাব্দীর মাঝামাঝিতে পাশ্চাত্যের স্কলারগণও মুসলিম মনিষীদের গবেষনাকে ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করতে শুরু করেন।
সুতরাং বিজ্ঞান গ্রীক কিংবা রোমান কিংবা হেলেনিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দ্বারা প্রভাবিত ছিলো না, বরং এটি মহাগ্রন্থ আল্-কুরআন, নবী মুহাম্মদ (সা.) এবং ক্লাসিকেল মুসলিম চিন্তাবিদদের একটি বিস্ময়কর উপহার।