নিকষ অন্ধকারে ডুবে থাকা জাজিরাতুল আরবের বুক চিরে, তপ্ত বালুকায় চিক চিক আলোকরশ্মির ঢেউ তুলে এসেছিলেন একজন মরু সাইমুম- যিনি শত শত বছরের অন্ধকারে ঘুমন্ত মানুষকে জাগিয়ে তুললেন। অন্ধকার দূরীভূত হলো, মানুষ জেগে উঠল একরাশ সোনালি আভায় । পথহারা মানুষ ফিরে পেলো সঠিক পথের দিশা। আর তিনিই হলেন আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মদ রসুলুল্লাহ সা.।

মানুষ যা কিছু সুন্দর ও মহৎ কল্পনা করতে পারে, নবিজি এককভাবে ছিলেন তার বাস্তব উদাহরণ। তাঁর মহান চরিত্র চির আধুনিক- যা কখনো সেকেলে বা পুরাতন হয় না বরং তা যেকোনো যুগ বা কালের সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে। পৃথিবী যখন যেই সমস্যার সম্মুখীন হবে, রসুল সা.-এর চরিত্র ও সুন্নাহ তখন কার্যকর প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে।

মহানবি সা. তার চারিত্রিক পরশ পাথরের মাধ্যমে বিশ্ব সমাজকে সুন্দরভাবে পরিগঠন করতে প্রয়াস চালান। সততা, নৈতিকতা, সভ্যতা, শালীনতা, পবিত্রতা ও শিষ্টতাসহ অসংখ্য নীতি ও পদ্ধতি তার জীবন থেকে বের হয়ে অন্যদের আলোড়িত করেছেন। যেমন, ‘সত্যবাদিতা’র জন্য আরববাসী তাকে কিশোর বয়সেই ‘আল আমিন’ এবং ‘আস সাদিক’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল । এছাড়া নবিজির শিশুপ্রেমও সর্বজনবিদিত।

একটি স্বপ্নিল পৃথিবীর জন্য তথা পৃথিবীকে মানুষের বাস উপযোগী করার জন্য আমাদের প্রত্যেকের উচিত মুহাম্মদ সা.-এর মহান চরিত্রের অনুসরণ করা। তিনিই আমাদের জন্য একমাত্র অনুকরণীয়-অনুসরণীয় ‘সর্বোত্তম মহান আদর্শ’। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। বয়স বিচারে মনোবিকাশের উৎকৃষ্ট সময় শিশু-কিশোরকাল। এক্ষেত্রে সৃজনশীল সাহিত্য বিশেষ করে গল্প হলো তাদের অন্যতম প্রধান উপজীব্য। আর সেই গল্পের মধ্যে যে আদর্শ থাকে, তা তাদের মনোবিকাশে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

কাদামাটির মতো নরম মনের এ শিশুদের বিকাশের জন্য তাই প্রয়োজন একটি সর্বজনীন ও উত্তম আদর্শ। আর রসুল সা. হলেন আমাদের সর্বকালের সর্বোত্তম আদর্শ -যা মানুষকে ভেতর থেকে বদলে দেয়, আলোকিত মানুষ হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়। তাই নবিজির কথা, কাজ বা নির্দেশনার আলোকে রচিত শিশুতোষ গল্প যেমন শিশুদের মনোবিকাশ ও আনন্দদানে সক্ষম, তেমনি উন্নত নৈতিকতার আলোকচ্ছুটায় তা হয়ে উঠবে একজন আদর্শবান ও আলোকিত মানুষ গড়ার চাবিকাঠি।

এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে তুর্কি মুসলিম স্কলার প্রফেসর ড. মেহমাত ইয়াসার কানদেমির রচিত  40 Stories Hadiths for Children  গ্রন্থটির বঙ্গানুবাদ কিছুটা পরিমার্জিত আকারে ‘৪০ হাদিস-শিশুতোষ গল্প’ শিরোনামে প্রকাশ করা হলো। সহজবোধ্য ও প্রাঞ্জল ভাষায় শিশুদের উপযোগী এই গ্রন্থটি কোমলমতি সকল শিশু-কিশোরদের কাছে ব্যাপক সমাদৃত হবে। এছাড়া এটি প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি লেবেলের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবই অথবা সহায়ক বই হিসেবে কাজে লাগবে।

বইটির প্রতিটি গল্পই শিক্ষণীয়। আদব, আখলাক, আচার-আচরণ, পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যসহ নবীজি ‎ﷺ এর হাদীস থেকে জীবন গড়ার পাথেয় রয়েছে প্রতিটি গল্পে। গল্পে গল্পে হাদীসের শিক্ষাগুলো শিশু-কিশোরদের একাধারে একজন ভালো মানুষ, একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি, সেই সাথে একজন দ্বীনদার মানুষ হতে শিক্ষা দেবে। তাদের তরবিয়ত নিশ্চিত হবে এমনভাবে যাতে করে সে চিনবে সৃষ্টিকর্তাকে। তার আদর্শকে। তার জীবন চলার পথকে। বইটি থেকে তারা এমন কিছু শুনবে, যাতে তারা জীবনের আসল উদ্দেশ্য খুঁজে পাবে। বড় হয়ে মাতা-পিতাকে সম্মান করতে শিখবে। উত্তম আদব, আখলাকে একজন সত্যিকারের মানুষ হয়ে গড়ে ওঠবে।